কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে জেগে ওঠা চরে জমি হারানো হাজারও ভূমিহীন কৃষক এখন তাদের স্বপ্ন বুনছেন। নদীভাঙনের শিকার হয়ে, নিজের আবাদযোগ্য জমি না থাকলেও, ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফসল আবাদ করে তারা অন্তত নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য শাক-সবজি এবং ফলমূল উৎপাদন করছেন।
উপজেলার রাজারভিটা এলাকার কৃষক মোঃ কেরামত আলী বলেন, “আমাদের কিছুই ছিল না। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সব জমি হারিয়েছি। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের চর আমাদের নতুন জীবন দিয়েছে। প্রতিবছর চরে আলু, পিয়াজ, রসুন, ভুট্টা, ডাল, শাক-সবজি ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করি। এই চাষেই কিছুটা হলেও আমাদের চাহিদা পূরণ হয়।”
এছাড়া, একই এলাকার আবুল হোসেন ও ফুল মিয়া জানান, গত বছর তারা নদের চরে আলু আবাদ করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি কিছু বিক্রি করেছেন। তবে, এ বছর বীজের দাম বেড়ে গেছে এবং আলুর দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচও উঠছে না। তবুও, অন্যান্য ফসল থেকে লাভ হওয়ায় তারা খুশি।
“আমরা ভূমিহীন। এক সময় আমাদের অনেক জমি ছিল কিন্তু সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমাদের একমাত্র অবলম্বন হল এই চর। এখানেই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন,” বলছিলেন তারা।
এ ছাড়া, চিলমারী উপজেলার রাজারভিটা, পাত্রখাতা, গুড়াতি পাড়া, পুটিমারী এবং কাজলডাঙ্গা এলাকায় কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি ইরি-বোরো ধান চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখছেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা চরে কৃষকরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমিতে জৈব সার দিচ্ছেন, কেউ মাটি সমান করছেন এবং নারী শ্রমিকরা দলবেঁধে বোরো ধান ক্ষেতে কাজ করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষান দাস জানান, “নদী চরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে, যা বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এমনকি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন আশা করা যাচ্ছে।”