ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে গেল রবিবার ভোর থেকে ভারত সীমান্তের কালজানি নদী হয়ে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি ভেসে এসেছে বাংলাদেশে। বাকল ও শিকড়বিহীন লালচে কাঠগুলো স্থানীয়দের নজর কাড়ে। অনেকে ভেবে বসেন, এগুলো রক্তচন্দন বা শ্বেতচন্দন কাঠ। ফলে নদীতে নেমে গুঁড়ি ধরতে শুরু করেন অনেকে, তীরে তুলে এনে ‘চন্দন কাঠ’ হিসেবে বিক্রিও চলছে—যেখানে একেকটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে বন বিভাগ বলছে, মানুষ ভুলবশত সাধারণ কাঠকে চন্দন ভেবে বিক্রি করছেন। বিভাগটির এক কর্মকর্তা বলেন, “কাঠের গঠন ও গন্ধ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে এটি চন্দন নয়, অন্য কোনো বনজ গাছের কাঠ।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হাসিমারা বনাঞ্চল দিয়ে কালজানি নদী প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিতে ওই বনাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখান থেকেই কাঠের গুঁড়িগুলো ভেসে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রবিবার ভোর থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার নদীপাড়ের মানুষ বিভিন্ন উপায়ে এসব গুঁড়ি তীরে তুলেছেন। তবে এ সময় ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ীর খেলারভিটা এলাকায় গুঁড়ি তুলতে গিয়ে খামার নকুলা গ্রামের ধান ব্যবসায়ী মনছুর আলী (৪০) ডুবে নিখোঁজ হন।
নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মাসুদুর রহমান জানান, “নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অভিযান সমাপ্ত করা হয়।”
মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, দুই দিনে ভেসে আসা কাঠের গুঁড়ি কালজানি ও দুধকুমার নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কাঠের আকার ও মানভেদে একেকটি ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্ষতিগ্রস্ত কাঠ জ্বালানিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে সোমবারও নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, বেরুবাড়ী ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন ঘাটে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ নৌকা নিয়ে, কেউ সাঁতরে গুঁড়িগুলো ধরছেন ও তীরে তুলছেন।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পরীক্ষা করে জানা উচিত—ভেসে আসা কাঠগুলো আসলেই চন্দন কিনা, নাকি অন্য কোনো বনজ গাছের গুঁড়ি।