সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর পর আহত স্ত্রী মিতু সাত দিন ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেও জীবন যুদ্ধে হেরে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী মারা যাওয়ার খবরটি এলাকার মানুষকে ব্যথিত করেছে। এত অল্প বয়সে তাদের এমন পরিণতি কেউ মানতে পারছেন না। এক বছর আগে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন পিয়াল-মিতু। তাদের এক বছরের দাম্পত্যজীবন বেশ সুখের ছিল। কিন্তু আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় সব কিছু তছনছ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল।
পিয়াল হাসান (৩০) চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ময়নার খামার গ্রামের শাহালমের ছেলে।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পিয়াল সবার বড়। কুড়িগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল থেকে পাস করার পর ঢাকায় বিএসসি করেন। এরপর ইবিএস গ্রুপে চাকরি নেন। তারা দুজন (স্বামী-স্ত্রী) ঢাকায় থাকতেন। এদিকে, মিতু (২৪) উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোলদারপাড় গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমান দুলুর মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মিতু সবার বড়। সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
গত ১৭ আগস্ট ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলযোগে পিয়াল ও মিতু কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছলে তাদের মোটরসাইকেলটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল। পরে উপস্থিত লোকজন মিতুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গোবিন্দগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
মিতুর স্বজনেরা জানান, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ১৯ আগস্ট ঢাকা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং ২০ আগস্ট ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। মিতুর অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাওয়ায় ২২ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টার এবং অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ওই দিন চিকিৎসক তার ডান হাত ও পা কেটে ফেলেন। এর দুই দিন পর গত ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিতু।
শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা থেকে মিতুর লাশ গ্রামে পৌঁছলে একনজর দেখার জন্য আশপাশের লোকজন ছুটে যান তার বাড়িতে। এ সময় ওই এলাকা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোলদারপাড় গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মিতুর স্বামী মারা যাওয়ার পর সে পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচতে পারল না। সবাইকে সচেতন হয়ে মোটরসাইকেল চালানোর দরকার। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবার দুটির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।