কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। অনেক নাটকীয়তার পরে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার (১৯সেপ্টেম্বর) ইংরেজি ১ম পত্র এবং মঙ্গলবার ইংরেজি ২য় পত্রের হুবহু হাতে লেখা প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের হাতে চলে যায়।
পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া উত্তর পত্রের সাথে পরের দিন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়। প্রতিটি প্রশ্নপত্র ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি হয় গোপনে।
মঙ্গলবার রাতেই দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম, সচিব প্রফেসর জহির উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মধ্যরাত পর্যন্ত তদন্ত করেন।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মধ্যরাতে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক রাসেল আহমেদ এবং ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক জোবায়েরকে আটক করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে তা কেন্দ্রের বাইরে পাঠানো হয়। পরে সেই প্রশ্নের হাতে লেখা কপি চুক্তি করা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলি করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিবসহ পরীক্ষা পরিচালনায় থাকা একাধিক শিক্ষক জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আগামী উচ্চতর গণিত এবং বিজ্ঞান বিভাগের ৪টি পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া গেছে। তাই আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসব পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইংরেজি শিক্ষক মাইদুল ইসলাম মুকুল বলেন, আমি এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই। সেখানকার এবং কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আমার নিকট হাতে লেখা প্রশ্ন নিয়ে আসে সমাধানের জন্য। পরে তাদের কাছে জানতে পারি কুড়িগ্রাম, রংপুর, ভূরুঙ্গামারী থেকে তাদের বিভিন্ন বড় ভাইদের মাধ্যমে এগুলো পেয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রেসক্লাবসহ প্রশাসনকে অবহিত করি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ভূরুঙ্গামারী থেকে কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে হাতে লেখা উত্তর পত্রের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মিল-অমিল আছে কিনা আমার দেখার বিষয় না। এটা সরকারের অনেক বিভাগ আছে, পুলিশ আছে তাদের দায়িত্ব।
ভূরুঙ্গামারী সহকারী পুলিশ সুপার মোরশেদুল হাসান বলেন, আটক তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা হলে তদন্ত করে পুরো বিষয়টি উদঘাটন করা হবে।